দিনকাল যতই ডিজিটাল হচ্ছে ততই কম্পিউটার ডিভাইস এর গুরুত্ব বাড়ছে।আমাদের জীবনের অনেক কাজেই আসলে কম্পিউটার লাগে। কম্পিউটার প্রথমে তৈরি হয়েছিল গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে ।কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় কম্পিউটারে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যোগ হয়েছে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজন অনুসারে।কম্পিউটার যখন আবিষ্কার হয়েছিল তখন দাম অনেক থাকলেও বর্তমানে কম্পিউটারের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে।আমাদের জীবনযাপনকে সহজ করেছে কম্পিউটার এবং এটি মুহূর্তের মধ্যে অনেক কাজ করতে পারে। মানুষ অনেক ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ।বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় কম্পিউটারের ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন ধরনের তথ্য কম্পিউটার ব্যবহার করে প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হয় এবং সেই তথ্য বিভিন্ন সময় কাজে লাগানো হচ্ছে।কম্পিউটারের কিছু মজাদার বিষয় রয়েছে যেগুলো একদিকে মজার এবং অবাক করার মতো। চলুন জেনে নেয়া যাক সেসব বিষয় গুলো-
1-প্রতি মাসে 5 হাজারেরও বেশি ভাইরাস রিলিজ হয়
ভাইরাস আমাদের কম্পিউটারের কতই না ক্ষতি করে থাকে।এক গবেষণা সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে প্রতিমাসে 5 হাজারেরও বেশি ভাইরাস রিলিজ করা হয়।
2-স্বাভাবিক অবস্থা থেকে কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকানো অবস্থায় চোখের পলক কম পরে
প্রযুক্তির এই যুগে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করি। এর ফলে আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ছে। বলা যায় আমরা কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি একনাগাড়ে আমরা তাকিয়ে থাকি কম্পিউটার দিকে ।তবে কম্পিউটারের দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকা কোনরকমে উচিত নয়। কারণ একনাগাড়ে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের চোখ শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাক।সেজন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর আমাদের কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে চোখ সরাতে হবে ।বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন 2 ঘন্টা পর পর 15 মিনিট চোখের বিশ্রাম নিতে হবে। এতে করে আমাদের চোখের লিকুইড শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে ।আমাদের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক এবং উন্নত থাকবে।একজন সাধারন মানুষের ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তাকানোর সময় এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের বাইরে তাকানোর সময় চোখের পলক ফেলার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় মানুষের গড়ে সাতবার চোখের পলক পড়ে। কিন্তু ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দিকে না তাকিয়ে থাকা অবস্থায় মানুষের গড়ে বিশ বার চোখের পলক পড়ে।সুতরাং কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করার সময় আমাদের অবশ্যই চোখের সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে।
3-ইমেইল এর আবিষ্কার ইন্টারনেট আবিষ্কারের আগেই হয়েছিল
আমরা সবাই জানি যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ইন্টারনেটের ভূমিকা অপরিসীম ইমেইল সাধারণত ইন্টারনেটের সাহায্যে আদান প্রদান করা হয়ে থাকে। ইমেইলে সাহায্যে আমরা মুহূর্তেই যেকোন ডকুমেন্ট পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাঠাতে পারি। ফলে আমাদের জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে।আপনারা জেনে অবাক হবেন যে ইন্টারনেট যখন আবিষ্কার হয় তার আগেই ইমেইলের আবিষ্কার হয়েছিল।
4-কম্পিউটারের ইনপুট সবসময় 0 আর 1 এর সমষ্টি
কম্পিউটারের চমকপ্রদ ফিচার দেখে আমরা কতই না অবাক হই। কম্পিউটারের ব্যবহার বলে শেষ করা যাবেনা ।কিন্তু কম্পিউটারে আমরা অনেক ধরনের সংখ্যা বর্ণ ইত্যাদি ইনপুট দিয়ে থাকি।কম্পিউটারে ইনপুটকৃত বিভিন্ন সংখ্যা, বর্ণ কম্পিউটার বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়ায় সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ করে ।মূলত গণিতের উৎকর্ষ সূচিত হয়েছে কম্পিউটারের বর্তমান ফিচারের মাধ্যমে।সবচেয়ে মজার তথ্য হলো যে কম্পিউটার আমরা ব্যবহার করি তাতে যা ইনপুট করি না কেনো সেটা সবসময় শূণ্য আর এক (জিরো ও ওয়ান) এর সমষ্টি।
5-পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভাইরাস মাইডুম
আধুনিক যুগে কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারের অনেক ক্ষতি করে। কম্পিউটার ভাইরাসের কারণে বর্তমানে কম্পিউটারের সুরক্ষা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে ।অনেক দেশ এর পেছনে বিনিয়োগ করছে। এর হলে সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট লোকের চাহিদা বেড়েছে পৃথিবী জুড়ে। আধুনিক যুগে অনেক ভাইরাস রিলিজ হলেও কয়েকটি ভাইরাস খুবই ক্ষতিসাধন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হল মাইডুম। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল কম্পিউটার ভাইরাস হলো মাইডুম।ভাইরাসটি আনুমানিক 38.5 বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছিল।
6- প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের ওজন অনেক বেশি ছিল
বর্তমানে আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তা অত্যন্ত ওজনে হালকা এবং অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার হল ইনিয়াক যেটা 27 টনেরও বেশি ওজন বিশিষ্ট এবং এটি 1800 বর্গফুট জায়গা দখল করেছিল।
7-একই সারিতে থাকা বাটন দিয়ে TYPEWRITER শব্দটি টাইপ করা যায়
কম্পিউটারে সাধারণত অনেক বাটন থাকে।এই সকল বাটন দিয়ে অনেক কাজ করা হয়, অনেক শব্দ লেখা যায়। সাধারনত বিভিন্ন শব্দ লিখতে কম্পিউটারের বিভিন্ন সারির বাটন ব্যবহার করা হয়। TYPEWRITTER শব্দটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় শব্দ যেটা একজন মানুষ কম্পিউটারের কি বোর্ডের একই সারিতে থাকা অক্ষর গুলো দিয়ে টাইপ করতে পারে।
8-মানব মস্তিষ্ক কম্পিউটার থেকে শক্তিশালী
কম্পিউটারের বিভিন্ন ব্যবহার আমাদের বিস্ময়ে অভিভূত করে। কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে অনেক গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। অনেকে মনে করেন যে কম্পিউটার হচ্ছে মানুষের চেয়েও শক্তিশালী। কিন্তু না।যদি কম্পিউটার মানব মস্তিষ্কের চেয়ে শক্তিশালী হতো তবে এটা 38 হাজার ট্রিলিয়ন সমস্যা সমাধান করতে পারতো প্রতি সেকেন্ডে এবং 3580 টেরাবাইট স্মৃতিশক্তি ধারণ ক্ষমতার অধিকারী হতো। তাই বলা যায় মানব মস্তিষ্ক কম্পিউটার থেকে শক্তিশালী।
9-মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলের শুরুটা হয়েছিল গ্যারেজ থেকে
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম দুই জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান হল মাইক্রোসফট এবং অ্যাপল। বিশ্বের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এই দুটি কোম্পানি বিপ্লব ঘটিয়েছে। তাদের এখন পুরো বিশ্বজুড়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ।অনেকেই কর্মসংস্থানের জন্য তাদের ওপর নির্ভরশীল। দুনিয়াকে গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করতে এই দুটি কোম্পানির অবদান অপরিসীম।মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলের একটি বিষয়ে মিল খুঁজে পাওয়া যায় আর সেটা হলো তাদের শুরুটা হয়েছিল গ্যারেজ থেকে।
10-পৃথিবীর 90% মুদ্রা কম্পিউটারে সংরক্ষিত
বর্তমান বিশ্বে অনেকেই টাকার অভাবে আছেন আবার অনেকেই টাকায় ফুলে ফেঁপে উঠছেন। আমরা বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটায় সাধারণত টাকার নোট ব্যবহার করি। প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট সূচক অনুসারে নির্দিষ্ট সংখ্যক টাকার নোট অভ্যন্তরীণ বাজারে ছাড়ে। সবচেয়ে মজার বিষয় হল পৃথিবীর 10% হল ফিজিক্যাল মানি এবং বাকি 90 শতাংশ মুদ্রার সব কম্পিউটারে সংরক্ষিত আছে।
11- প্রথম হার্ডডিস্ক মাত্র 5 এমবি ডাটা ধারণ করতে পারত
বর্তমানে আমরা যে হার্ডডিস্ক ড্রাইভ ব্যবহার করি সেটা অনেক তথ্য ধারণ করতে পারে। এই তথ্য ধারণের হিসাব এমবি ছাড়িয়ে জিবি তে রুপান্তরিত হয়েছে। আবার অনেক সময় টেরাবাইটেও তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। সুপার কম্পিউটারগুলোর ক্ষমতা আরো অধিক।প্রথম হার্ডডিস্ক ড্রাইভ তৈরি হয়েছে 1979 সালে এবং এটা 5 এমবি ডাটা ধারণ করতে পারে।
12- 80% ইমেইল স্প্যাম
আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের ইমেইল পেয়ে থাকি। অনেক সময় ইমেইলের পরিমান এতই বেশি হয় যে আমাদের মূল ইমেইল আইডি দিয়ে সবকিছু করা সম্ভব হয় না। সেজন্য আমরা অনেক সময় একের অধিক ইমেইল আইডি খুলে থাকি। ইন্টারনেটের জগতে আমাদেরকে পাঠানো ইমেইলের প্রায় অনেকগুলোই স্প্যাম।প্রতিদিন যে ইমেইল গুলো পাঠানো হয় তার 80 শতাংশই হলো স্প্যাম।
13-ইন্টারফেস ম্যানেজার
বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় কম্পিউটার অপারেটর হল উইন্ডোজ। উইন্ডোজের চাহিদা বিশ্বব্যাপী প্রকট।বর্তমানে উইন্ডোজের অনেক উন্নত সংস্করন বের হচ্ছে।উইন্ডোজের আসল নাম ইন্টারফেস ম্যানেজার।
14- কম্পিউটার মাউস কাঠের
কম্পিউটার মাউস আমাদের অনেক কাজে লাগে। সময়ের সাথে সাথে মাউস হয়েছে অনেক উন্নত ।বর্তমানে তারবিহীন মাউস বাজারে পাওয়া যায়।প্রথম তৈরি কম্পিউটার মাউসটি কাঠের তৈরি ছিল।
15-বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামার
বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার ছিলেন একজন মহিলা এবং তার নাম অ্যাডা লাভেলাস (Ada Lovelace)।সে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং একজন গণিতজ্ঞ ও লেখক হিসেবে কাজ করতেন।সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। সে এনালিটিক্যাল ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার জন্য বিখ্যাত ছিল।
আরও পড়ুন: স্বপ্নের পদ্মা সেতু,প্রাণীর বিভিন্নতা বা প্রাণীবৈচিত্র্য (Animal Diversity)
কম্পিউটারের যেমন ভালো দিক আছে তেমনি অনেক খারাপ দিকও আছে। আজকাল বিভিন্ন ই-কমার্সে কম্পিউটারের বহুল ব্যবহার হচ্ছে ।আমারা বিনোদনের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করি । কারণ বিভিন্ন ধরনের মুভি, নাটক, ভিডিও ,ছবি, লেখা কম্পিউটারের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই। কম্পিউটার ডিভাইসের মাধ্যমে দূর-দূরান্ত থেকে আমরা পড়াশোনা করতে পারি।কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে এ কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে। কম্পিউটার ভাইরাসের মাধ্যমে কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতি করা যায়।তাই কম্পিউটার ভাইরাস বর্তমানে এক আতঙ্কের নাম ।কম্পিউটার যেমন জীবন যাপন সহজ করেছে তেমনি কম্পিউটারের নিরাপত্তার কথা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। কম্পিউটার আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজসাধ্য করেছে। আমাদেরকে অবশ্যই কম্পিউটার ব্যবহারের সময় নীতি-নৈতিকতা মেনে চলতে হবে।অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার কোন ক্রমেই ভালো নয়। আমাদেরকে জীবনের প্রয়োজন অনুযায়ী কম্পিউটার ব্যবহার করতে হবে। আমরা কম্পিউটারের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন করতে সক্ষম হব।

0 Comments