প্রাণীর বিভিন্নতা বা প্রাণীবৈচিত্র্য (Animal Diversity)
জীববিজ্ঞানীগণ এ পর্যন্ত প্রায় 2 লক্ষ 70 হাজার ভাস্কুলার উদ্ভিদ এবং 15 লক্ষেরও বেশি প্রাণী প্রজাতি শনাক্ত করেছেন ।এসব প্রজাতির মধ্যে নানান কারণে ভিন্নতা দেখা দেওয়া সত্ত্বেও সহজভাবে অধ্যয়ন করার জন্য প্রাণীবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী প্রাণীজগতকে শ্রেণীবিন্যাস করেছেন।
প্রাণীবৈচিত্র্য কি?
পৃথিবীর সমস্ত পরিবেশ যেমন পাহাড়, তুন্দ্রা অঞ্চল, মরুভূমি, সমতল ভূমিতে বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে জিনগত, প্রজাতিগত ,বাস্তুসংস্থানগত যে জীববৈচিত্র্য দেখা যায় সেটাই প্রাণীবৈচিত্র্য। দেহের গঠন প্রণালী থেকে শুরু করে খাদ্যগ্রহণ, চলন, প্রজনন ইত্যাদি বিষয়ে প্রায় সকল প্রাণীর মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।পৃথিবীর বিচিত্র সব পরিবেশে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান প্রাণীরা বিচরণ করে। প্রত্যেক প্রাণী তাদের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
পৃথিবীর বিচিত্র এবং অনন্য বৈশিষ্টমন্ডিত পরিবেশে কোনো প্রাণী সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে, আবার কোনো প্রাণী মন্থর গতিতে হেঁটে চলেছে অথবা কোনো প্রাণী দ্রুত , কোনো প্রাণী হয়তোবা গাছের ডালে দোল খাচ্ছে , কোনো কোনো প্রাণী ঝাকে ঝাকে পরিযায়ী হচ্ছে, আবার অনেক প্রাণী এতই ছোট যে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া দেখাই যায় না। যেমন,ব্যাকটেরিয়া।এদের মধ্যে খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়াতেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় ।যেমন , এদের কেউ তৃণভোজী, আবার কেউ মাংসাশী, কেউ সর্বভুক কিংবা কেউ পরজীবী।
প্রাণী বৈচিত্র্যের প্রকারভেদ:
প্রাণীবৈচিত্র্য নিম্নলিখিত তিন প্রকার
1.জিনগত বৈচিত্র্য
2.প্রজাতিগত বৈচিত্র্য
3.বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য
1. জিনগত বৈচিত্র :
একই প্রজাতির অন্তর্গত বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে জিনগত পার্থক্যের কারণে উক্ত প্রজাতির মধ্যে যে বৈচিত্র্যের উদ্ভব হয় তাই জিনগত বৈচিত্র।এই ধরনের বৈচিত্র্য যেহেতু একই প্রজাতির মধ্যে দেখা যায় সেহেতু এটা অন্তঃপ্রজাতিক বৈচিত্র্য। যেমন একজন আফ্রিকান মানুষ এবং একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষ একই প্রজাতির অর্থাৎ হোমো স্যাপিয়েন্সের অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদের চোখের রঙ, গায়ের রং, আকৃতিতে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। জিনগত পার্থক্যের কারণেই এদের মধ্যে বৈচিত্র্যতা দেখা দিয়েছে।
2.প্রজাতিগত বৈচিত্র্য:
ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যে বিদ্যমান বৈচিত্র্যকে প্রজাতিগত বৈচিত্র বলা হয়। দুইটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী কখনোই এক রকম হয় না।একই গণভুক্ত প্রজাতিগুলোর মধ্যে ক্রোমোজোম সংখ্যা ও আঙ্গিক গঠনের যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং সিংহ একই গণভুক্ত দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এ ধরনের বৈচিত্র্যকে আন্তঃপ্রজাতিক বৈচিত্র বলা হয়। এদের মধ্যে গণপর্যায়ের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মিল থাকলেও প্রজাতি পর্যায়ে ক্রোমোজোম সংখ্যা ও জিনের বিন্যাস ভিন্ন হওয়ার ফলে এদের বৈশিষ্ট্যাবলীর মধ্যে প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বিরাজ করে।
3.বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য :
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুর সাথে জীবজগতের মিথস্ক্রিয়ায় ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশীয় একক বা বায়োম সৃষ্টি হয়। যেমন মরুবায়োম,তৃণভূমি বায়োম। প্রতিটি বায়োমে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বিভিন্ন প্রাণী বাস করে।তুন্দ্রা বায়োমের শ্বেত ভাল্লুক এবং বনভূমি বায়োমের ভাল্লুক এর মধ্যে এ বৈচিত্র্য বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যের একটি উদাহরণ।
0 Comments